‘বইমেলা’ শেষের পথে


দিন যতোই গড়াচ্ছে ততোই ঘনিয়ে আসছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার ক্ষণ।
সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) মেলার পঁচিশতম দিনে দর্শনার্থী ও বইপ্রেমীদের ভিড় ছিলো বেশি। মেলার শেষ সময়ে এসে পছন্দের বইগুলো নিজের সংগ্রহে রাখার জন্য সবাই চষে বেড়িয়েছেন পুরো মেলা প্রাঙ্গণ। অবসর প্রকাশনী থেকে চোখের বালি বইটি নিয়েছেন গাজীপুর থেকে আসা এস এম রাইহান আরেফিন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, মেলায় আসার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু যানজটের
কারণে আসার সাহস করিনি। এখন তো শেষ সময়, না এলে মিস করবো। পছন্দের বই
সংগ্রহের পাশাপাশি বন্ধুর বের হওয়া কবিতার বইও নেবেন বলে জানান তিনি।
তবে মেলায় এবারের বিক্রি নিয়ে প্রকাশনীগুলো ভিন্নমত পোষণ করেছে। অনেকে স্টলের অবস্থানের কারণে বিক্রি কম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
ইত্যাদি প্রকাশনীর ম্যানেজার প্রবীর কুমার বাংলানিউজকে বলেন, মেলায় গতবার প্রবেশ পথে আমাদের স্টল হওয়াতে বিক্রি ছিলো বেশি। সহজে সবার দৃষ্টিতে পড়তো।
সময় প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী রাকিব বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর একুশে
ফেব্রুয়ারির দিন আমাদের বিশাল একটা টার্গেট থাকে। কিন্তু এবার চকবাজারের
ঘটনা মেলায় প্রভাব পড়েছে। যার কারণে বিক্রি কম হচ্ছে।
তবে বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল।
তিনি বলেন, মেলায় গতবারের চেয়ে বিক্রি বেশি হচ্ছে। শেষ কয়দিনে সব ছাড়িয়ে
যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে, মেলায় নতুন বই এসেছে ১৪৫টি। তার মধ্যে গল্পের বই ২১টি, উপন্যাস
১৫টি, প্রবন্ধ ৬টি, কবিতার বই ৫৬টি, গবেষণা ১টি, ছড়া ৪টি, শিশুসাহিত্য ৫টি,
জীবনী ৫টি, রচনাবলী ১টি, মুক্তিযুদ্ধ ১টি, বিজ্ঞান ১টি, ভ্রমণ ৩টি, ইতিহাস
৩টি, চি:/স্বাস্থ্য ৫টি, ধর্মীয় ১টি, অভিধান ১টি, সায়েন্স ফিকশন ১টি এবং
অন্যান্য ১৫টি।
বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের অনুবাদ সাহিত্যের
চালচ্চিত্র শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক কাজল
বন্দ্যোপাধ্যায়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, আনিসুর
রহমান, আলম খোরশেদ এবং রাজু আলাউদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও অনূদিত বইয়ের তালিকার
দিকে লক্ষ্য করলে মনে হয় উদারচিত্ততা, প্রগতিশীলতা, বামপন্থী চিন্তাভাবনা
ইত্যাদির প্রতি আকর্ষণ উবে যায়নি। এক সময়ে ফ্রাঙ্কলিন পাবলিকেশন্স, প্রগতি
প্রকাশনী, রাদুগা, পিপলস পাবলিশিং হাউস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনায়
এখানে বিপুল পরিমাণে অনূদিত বইয়ের বাজার গড়ে উঠেছে। কেউ স্থানীয়ভাবে বড়
লেখকদের দিয়ে অনুবাদের কাজ করিয়েছে। তার ফলে অনুবাদ কেন্দ্রিক বিশ্ব সংযোগ
বেড়েছে। তবে অনুবাদের ক্ষেত্রে অনেক সময়েই আদর্শিক লক্ষ্য প্রাধান্য
পেয়েছে। আবার ফরমায়েশি কাজের কিছু সীমাবদ্ধতাও ছিলো। তিনি বলেন, বর্তমানে
বাংলাদেশে অনুবাদের যে প্রাবল্য দেখা দিয়েছে তার মধ্য থেকে বস্তুনিষ্ঠ এবং
যথাযথ অনুবাদের নিশ্চয়তা বিধান করা অতীব জরুরি।
সভাপতির বক্তব্যে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, আমাদের অনুবাদ সাহিত্যকে সমৃদ্ধ
করতে হলে এর সংখ্যা যেমন বাড়াতে হবে তেমনি এর গুণগত মানের উন্নয়নও ঘটাতে
হবে। এজন্য বিদেশি ভাষার সাহিত্যকে আমরা বাংলা ভাষার গুণগত মান বজায় রেখে
অনুবাদের উদ্যোগ নেবো। আমাদের দেশের সাহিত্যকে যদি বিশ্বের দরবারে পৌঁছাতে
চাই তাহলে অনুবাদই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ঘোষণা
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯
উপলক্ষে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চারটি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ঘোষণা করেন।
২০১৮ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের
জন্য কথাপ্রকাশকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০১৯, ২০১৮ সালে
প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ বিভাগে গোলাম
মুরশিদের বিদ্রোহী রণক্লান্ত : নজরুল-জীবনী গ্রন্থের জন্য প্রথমা
প্রকাশনকে, মইনুদ্দীন খালেদের মনোরথে শিল্পের পথে গ্রন্থের জন্য
জার্নিম্যান বুক্সকে এবং মারুফুল ইসলামের মুঠোর ভেতর রোদ গ্রন্থের জন্য
চন্দ্রাবতী একাডেমিকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৯ দেওয়া হয়।
২০১৮ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক
গ্রন্থ প্রকাশের জন্য পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স লিমিটেডকে রোকনুজ্জামান খান
দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০১৯ এবং ২০১৯ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায়
অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায়
সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মধ্যমা (এক ইউনিট), বাতিঘর (বহু ইউনিট), পাঞ্জেরি
পাবলিকেশন্স লিমিটেড (প্যাভেলিয়ন)-কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার
২০১৯ দেওয়া করা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ এর সমাপনী
অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব পুরস্কার তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।