সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি জার্মানিতে


তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জার্মানির বাজারে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির শীর্ষ বাজার ছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রানা প্লাজা ধসের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি কমায় গত বছর জার্মানি সেই অবস্থান দখল করে নেয়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আবারো শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইইউ বাজারে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে জার্মানি। বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির শীর্ষ গন্তব্য ইউরোপ। ইউরোপের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় জার্মানিতে।
এর পরে রয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডসহ অন্য দেশগুলো। গত জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ মাসে ইইউতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলার। গত বছর হয়েছিল ১ হাজার ১৪২ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে সারা বিশ্ব থেকে ইউরোপের দেশগুলোর পোশাক আমদানি গড়ে ৬১.৮৪ শতাংশ বাড়লেও সেখানে বাংলাদেশের বেড়েছে ৯.৪০ শতাংশ।
ইপিবি তথ্যানুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছর মোট ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে জার্মানিতে গেছে ৫৮৯ কোটি ডলারের পণ্য। এই আয় তার আগের অর্থবছরের চেয়ে সাড়ে ৭ শতাংশের বেশি। জার্মানিতে পণ্য রপ্তানির ৯৪ শতাংশই পোশাক খাতের দখলে।
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে। সবার ওপরে চীন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, জার্মানিতে ২০১৭-১৮ অর্থবছর ৫৮৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। তার আগের অর্থবছর রপ্তানি হয়েছিল ৫৪৭ কোটি ডলার। এর মধ্যে পণ্য রপ্তানির ৯৪ শতাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক। এ ছাড়া গত ২০০৮-০৯ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি ছিল ১ হাজার ২৩৪ কোটি ডলার। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সেই রপ্তানি বেড়ে ৩ হাজার ৬১ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। ১০ বছরে রপ্তানি বেড়েছে ১৪৮ শতাংশ বা ২.৪৮ গুণ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের সুফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। নতুন নতুন ক্রেতা পোশাকের ক্রয়াদেশ নিয়ে আসছেন। পুরোনো ক্রেতারাও ক্রয়াদেশ আগের চেয়ে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করছেন। ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পোশাক পণ্য রপ্তানি করে চীন যথারীতি প্রথম স্থানে রয়েছে। আর বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে। রপ্তানিকারক শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে বাকিগুলো হলো যথাক্রমে- তুরস্ক, ভারত, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মরক্কো, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া। রপ্তানিকাররা বলছেন, পণ্য রপ্তানির জন্য জার্মানির বাজারটি বিরাট। ফলে বাজারটিতে পোশাকের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি কয়েকগুণ বাড়ানোর সুযোগ আছে। সে জন্য ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের যথাযথ উদ্যোগ দরকার।
বিকেএমইএ’র সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, প্রচুর ক্রয়াদেশ আসছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
ইউরোপিয়ান কমিশনের ট্রেড হেল্প ডেস্কের তথ্য মতে, ২০১৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে সাড়ে তিন লাখ কোটি ইউরোর (১ ইউরোতে ৯৫ টাকা) পণ্য আমদানি করেছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে গেছে মাত্র ৩৭৮ কোটি ইউরোর পণ্য, যা ইইউর বাইরের দেশ থেকে জার্মানির মোট আমদানির দশমিক ১০ শতাংশ।
পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা জানান- জার্মানির অ্যাডিডাস, পুমা, মডার্ন, এস অলিভার, চিবো, স্পিরিট, লিডল, অলডি নর্থ ও সাউথ, বেলোটেক্স, ডেলটেক্স, জলো ফ্যাশন, চিক্যা, আরনস্টিংস ফ্যামিলি, ব্র্যান্ডস ফ্যাশন, জুরি ট্রেক্স, হরিজোনটিসহ অনেক বিখ্যাত ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের কারখানা থেকে পোশাক কিনে থাকে। তারা বলেন, রপ্তানি বাড়ানোর জন্য আমরা সব সময়ই নতুন বাজার খোঁজার কথা বলে থাকি। অথচ যেসব দেশে রপ্তানি করছি, সেসব দেশে রপ্তানি আরো বাড়ানোর সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে জার্মানি উপযুক্ত উদাহরণ হতে পারে।